ইব্রাহিম অপু : শংকা, সংশয়,আশঙ্কা, এই বুঝি নদী গর্ভে বিলীন হতে যাচ্ছে নিজ বসত ভিটা । প্রতিনিয়ত নদী কূলের মানুষ জীবন অতিবাহিত করছে প্রতিকূল পরিবেশের সাথে সংগ্রাম করে । সন্দ্বীপ বাংলাদেশের দক্ষিণ–পূর্ব উপকুলে অবস্থিত একটি দ্বীপ । এটি বঙ্গোপসাগরের উত্তর পূর্বকোণে মেঘনা নদীর মোহনায় অবস্থিত । চতুর্দিকে নদী আর সাগর বেষ্টিত এই দ্বীপের রয়েছে শত বছরের পুরনো ঐতিহ্য ইতিহাস। মনোরম স্নিগ্ধ পরিবেশ মুক্ত হাওয়া মনে হয় পৃথিবীর আর কোথাও নেই ।
এ উপকূলের জনগণকে প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক প্রতিকূল পরিবেশের সাথে সংগ্রাম করে জীবন যাপান করতে হচ্ছে। বর্তমান আধুনিক যুগেও সেখানে কাঙিক্ষত উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। জনগণ পাচ্ছে না উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা,পাচ্ছে না বিদ্যুৎ সুবিধা। এখানে নেই পর্যাপ্ত ভাল মানের কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, নেই কোন ভাল চিকিৎসার সুযোগ। উপকূল রক্ষার বেড়িবাঁধের বেহাল অবস্থার কারণে প্রতিনিয়ত সমুদ্রের জোয়ারের পানি ভিতরে প্রবেশ করে প্রতি বছরই জনগণের আর্থ–সামাজিক কাঠামো লণ্ডভণ্ড করে দেয়। সাইক্লোনের আগাম সতর্কতায় কখনো কখনো নিজেরাই সব গুটিয়ে নতুন আশ্রয়ের খোঁজে ছুটে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার নতুনভাবে জীবন যুদ্ধে নামে।
এ উপকূলের প্রায় ৫০ হাজার মানুষের আশ্রয় বেড়িবাঁধে। অবহেলিত উপকূলের জনগোষ্ঠী ধান চাষ, সামুদ্রিক মাছ, নৌকা তৈরী, দিনমজুিরসহ নানা পেশায় জড়িত। এক সময় তাদের ছিল গোলা ভরা ধান আর গোয়াল ভরা গরু। মেঘনার রোষাণলে পড়ে আজ তারা নিঃস্ব। তারা আজ সহায় সম্বল হারিয়ে জীবন জীবিকার তাগিদে বেড়িবাধে মানববেতর জীবন যাপন করছে ।
তবুও তাদের মধ্যে রয়েছে অধম্য সাহস ও কর্মস্পৃহা। অধিকাংশ মানুষ কঠোর পরিশ্রম ও ঝুঁকি নিয়ে জীবন যাত্রার উপায় উপকরণ ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এ উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ নিজেদের জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি দেশের উৎপাদন ও অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত রাষ্ট্রীয় আনুকূল্যের অভাবে অধিকাংশ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নীচে অবস্থান করছে।
পাকা রাস্তা নেই, বিদ্যুৎ নেই, নেই চিকিৎসার ব্যবস্থা। এমনকি বাজার সদাই এর জন্য মেঘনা পার হতে অনেক দূর যেতে হয় তাদের। শিক্ষার হারও কম, স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভাল নয়। এখানে ধনী–দরিদ্রের অবস্থান সুস্পষ্ট। তাদের মধ্যে রয়েছে বেকারত্ব, নিরক্ষরতা, পুষ্টিহীনতা, নিরাপদ পানি, পুঁজির তীব্র অভাব ও কৃষি পণ্যের বাজারজাতকরণসহ নানা ধরনের সমস্যা। তেমন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠান গড়ে না উঠায় লেখা পড়া নেই বললে চলে।
কিন্তু তাদের জীবনের গতি থেমে থাকে না, বাঁচার তাগিদে উপার্জনের পিছনে ছুটে চলে। কিছু কিছু পরিবার হাঁস মুরগি, গরু ছাগল পালন, মাছ চাষ, কাঁকড়া চাষ ও ঘরের আশে পাশে শাক সবজির বাগান করে আত্ননির্ভরশীল হওয়ার চেষ্টা করছে। কেউ কেউ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে অনেকেই জলদস্যুদের আক্রমণে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়। এখানে দুর্যোগের ঝুঁকি দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার জন্য যে ধরনের সচেতনতা ও প্রস্তুতিমূলক কর্মসূচি থাকা প্রয়োজন তা পর্যাপ্ত ও যথাযথ পরিমাণে না থাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতিবারই তাদের জান–মালের ক্ষতি সাধিত হয়ে থাকে। একেকটি দুর্যোগে হাজার হাজার পরিবার একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়ে।
গ্রীষ্ম, শীত, বর্ষা কিংবা শরৎ, সব ঋতুতেই মেঘনা নদীকে ঘিরে মানুষের আনাগোনা। গ্রীষ্মে শুকিয়ে কাঠ মেঘনা আর বর্ষায় জলে টইটুম্বুর সব সময় মানুষকে কাছে টানে। সকাল থেকে সন্ধ্যা গড়িয়ে খানিক রাত অবধি মেঘনা নদীর কূলে মানুষের আনাগোনা।
সন্দ্বীপ অধিকার আন্দোলনের সদস্য সচিব মোঃ হাসানুজ্জামান সন্দ্বীপি দৈনিক আজাদীকে বলেন, মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত মানুষগুলোর শিক্ষা, চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা গেলে তাদের দীর্ঘদিনের দুঃখ দুর্দশা অনেকখানি লাগব হবে।
তবুও উপকূলের লড়াকু মানুষেরা প্রাকৃতিক দুর্যোগকে মোকাবিলা করেই সাহসের সাথে বেঁচে আছে এবং যুগ যুগ ধরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে আসছে। এসব প্রতিকূলতা ও কষ্ট নিয়ে তারা বাঁচতে চায় এ সুন্দর পৃথিবীতে। যতদিন সূর্যের আলো আছে, যতদিন নদীর স্রোত থাকবে, ততদিন সময়ের সাথে পাল্টা দিয়ে তারা এগিয়ে যেতে চায় অনেক দূর।